BREAKING NEWS

Category 5

Category 6

Category 7

Category 1

Category 2

Category 3

Category 4

Friday, February 4, 2022

রাজবাড়ী জেলার ব্র্যান্ডিং ‘পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী’

 জেলা ব্র্যান্ডিং ☑

ভূমিকা:

খরস্রোতা পদ্মানদী বিধৌত জেলা রাজবাড়ী। পদ্মা নদীর কোলে গড়ে ওঠা এ জেলা পরিচিতি পেয়েছে ‘পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী’ হিসেবে। দেশের দক্ষিণ বঙ্গের ২১ টি জেলার প্রবেশদ্বার ও পদ্মা-যমুনার মিলনস্থল গোয়ালন্দ এ জেলাকে করেছে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট মন্ডিত। ফলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ জেলার বিশেষ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস , ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন ও সংস্কৃতিকে বিবেচনায় রেখে এ জেলার স্বাতন্ত্র্যকে বিকশিত করার লক্ষ্যে কার্যকরভাবে জেলা  ব্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলাকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল তুলে ধরা সম্ভব। এর মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলার স্বকীয়তা সংরক্ষণ ও পরিচিত বৃদ্ধির পাশাপাশি এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে  কাজে লাগানো যাবে,  যা এ অঞ্চলের ও দেশীয় সামগ্রিক অর্থনীতিতে  ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।জেলা পরিচিতি:



পদ্মা-যমুনার মিলনস্থল গোয়ালন্দ মহকুমাকে ভিত্তি করে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ রাজবাড়ী জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।

রাজবাড়ী জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত। আয়তন ১২০৪ বর্গ কিলোমিটার। রাজবাড়ী জেলা ২৩০৩৫′-২৩০৫৫′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯০০৯′-৮৯০৫৫′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।

 উত্তরে পাবনা জেলা, দক্ষিণে ফরিদপুর ও মাগুরা জেলা, পূর্বে মানিকগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা। নদী বিধৌত পদ্মার পলি মাটি দিয়ে এই জেলার অধিকাংশ ভূমি গঠিত। এই জেলার প্রধান নদী পদ্মা, গড়াই, হড়াই ও চন্দনা। বার্ষিক সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩৫.৮০সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১২.৬০সেলসিয়াস। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২১০৫ মিমি।

পদ্মা নদী: পদ্মা নদী (Padma River) মূলত গঙ্গার নিম্ন স্রোতধারার নাম, আরও নির্দিষ্টভাবে বলা যায় গোয়ালন্দ ঘাটে গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গম স্থলের পরবর্তী মিলিত প্রবাহই পদ্মা নামে অভিহিত। এককালীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ-চাঁদপুর স্টিমার চলাচল পথের অধিকাংশই এই নদী জুড়ে রাজবাড়ী জেলার উত্তরে পদ্মা নদী অবস্হিত।রাজবাড়ী জেলা ব্র্যান্ডিং: 

“পদ্মা কন্যা The Daughter of the Padma, 

  “পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী      

তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি” 

“The Daughter of the Padma, 

Rajbari is our pride”

রাজবাড়ী জেলার পুরাকীর্তি

 পুরাকীর্তি  ☑

 ১। রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবনঃ রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক বছরের প্রাচীন লাল ভবনটি রাজবাড়ী জেলার একটি অন্যতম পূরাকীর্তি। ১৮৭৮ সালে গোয়ালন্দ হাই ইংলিশ নামে এ স্কুলটি লাল ভবনে তত্কালীন জমিদার গিরিজা শংকর মজুমদার ও তার ভাই অভয় শংকর মজুমদার প্রতিষ্ঠা করেন। ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত অধিদপ্তর এই স্থাপনাকে সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। 

২। শাহ পাহলোয়ানের মাজারঃ রাজবাড়ী অঞ্চলে ষোড়শ শতকে ধর্ম প্রচারের জন্য আগমন করেন শাহ পাহলোয়ান এর মত আউলিয়ারা। ১৪৮০ হতে ১৫১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শাহ পাহলোয়ান বোগদাদ শরীফ পরিত্যাগ করে ফরিদপুর অঞ্চলে এসে চন্দনা নদীর তীরে বাসস্থান নির্মাণ করে উপাসনা করছিলেন। কথিত আছে শাহ পাহলোয়ান মৃত্যুর সময় শিষ্যদের তার কবর পূর্ব-পশ্চিম লম্বা-লম্বি দিতে বলেছিলেন। কিন্তু তার শিষ্যবর্গ প্রচলিত বিধানমতে যথানিয়মে তাকে কবরস্থ করেন। কিন্তু সকালে দেখা গেল তার কবর ঘুরে পূর্ব-পশ্চিম লম্বা-লম্বি হয়ে গিয়েছে। শাহ পাহলোয়ানই রাজবাড়ী অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের ভিত রচনা করে গেছেন। 

৩। নলিয়া জোড় বাংলা মন্দিরঃ বালিয়াকান্দি থানার নলিয়া গ্রামে একটি জোড় বাংলা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এর গঠন বিচিত্র। এ মন্দিরটি ১৭০০ সালে তৈরী বলে পন্ডিতগণ মনে করেন। 

৪। সমাধিনগর মঠ ( অনাদি আশ্রম) ঃ বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নে ১৯৪০ সালে স্বামী সমাধী প্রকাশরণ্য এ মঠটি নির্মাণ করেন যার উচ্চতা ৭০ ফুট (গম্বুজসহ), দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ ফুট এবং প্রস্থ ৫০ ফুট। এটি অনাদি আশ্রম বলে পরিচিত। স্বামীজী এ আশ্রমের মাধ্যমে ঐ এলাকার মানুষকে আলোর পথে অগ্রায়ণ করে গেছেন। 

৫। নীলকুঠিঃ ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর নীলকরদের অত্যাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং প্রজা সাধারণ অতিষ্ট হয়ে সংঘবদ্ধভাবে নীলকরদের বিরূদ্ধে রুখে দাড়ায়। শুরু হয় নীলবিদ্রোহ। রাজবাড়ীতে নীলবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এ সময় বালিয়াকান্দি থানার সোনাপুরের হাশেম আলীর নেতৃত্বে শত শত চাষী নীলকর ও জমিদারদের বিরূদ্ধে নীল বিদ্রোহে অংশ নেয়। বহু স্থানে নীলকুঠি আক্রমণ করে ও কাচারী জ্বালিয়ে দেয়। এ অঞ্চলের বসন্তপুর, বহরপুর, সোনাপুর, বালিয়াকান্দি, নাড়ুয়া, মৃগী, মদাপুর, সংগ্রামপুর, পাংশার নীলচাষীরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। ফলে ১৮৬০ সালে বৃটিশ সরকার নীল কমিশন বসান এবং নীল চাষ স্বেচ্ছাধীন ঘোষণা করেন। ধীরে ধীরে কৃত্রিম নীল উদ্ভাবিত হয় এবং প্রাকৃতিক নীল চাষ বন্ধ হয়ে যায়।


ভালো লাগলে লাইক,  কমেন্টস ও শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে  দিন। ধন্যবাদ













রাজবাড়ী জেলার পটভূমি

 জেলার পটভূমি ☑

রাজবাড়ী যে কোন রাজার বাড়ীর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। তবে কখন থেকে ও কোন রাজার নামানুসারে রাজবাড়ী নামটি এসেছে তার সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলার রেল ভ্রমণ পুস্তকের (এল.এন.মিশ্র প্রকাশিত ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ক্যালকাটা ১৯৩৫) একশ নয় পৃষ্ঠায় রাজবাড়ী সম্বন্ধে যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খান ঢাকায় সুবাদার নিযুক্ত হয়ে আসেন। এই সময় এই অঞ্চলে পর্তুগীজ জলদস্যুদের দমনের জন্যে তিনি সংগ্রাম শাহ্কে নাওয়ারা প্রধান করে পাঠান। তিনি বানিবহতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন এবং লালগোলা নামক স্থানে দুর্গ নির্মাণ করেন। এই লালগোলা দুর্গই রাজবাড়ীর কয়েক কিলোমিটার উত্তরে বর্তমান লালগোলা গ্রাম। সংগ্রাম শাহ্ ও তার পরিবার পরবর্তীতে বানিবহের নাওয়ারা চৌধুরী হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এল.এন.মিশ্র উক্ত পুস্তকে উল্লেখ করেন রাজা সংগ্রাম শাহের রাজ কারবার বা রাজকাচারী ও প্রধান নিয়ন্ত্রনকারী অফিস বর্তমান রাজবাড়ী এলাকাকে কাগজে কলমে রাজবাড়ী লিখতেন (লোকমুখে প্রচলিত) । ঐ পুস্তকের শেষের পাতায় রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে রাজবাড়ী নামটি লিখিত পাওয়া যায়। 

উল্লেখ্য রাজবাড়ী রেল স্টেশন ১৮৯০ সালে স্থাপিত। ঐতিহাসিক আনন্দনাথ রায় ফরিদপুরের ইতিহাস পুস্তকে বানিবহের বর্ণনায় লিখেছেন নাওয়ারা চৌধুরীগণ পাঁচথুপি থেকে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে বানিবহ এসে বসবাস শুরু করেন। বানিবহ তখন জনাকীর্ণ স্থান। বিদ্যাবাগিশ পাড়া, আচার্য পাড়া, ভট্টাচার্য পাড়া, শেনহাটিপাড়া, বসুপাড়া, বেনেপাড়া, নুনেপাড়া নিয়ে ছিল বানিবহ এলাকা। নাওয়ারা চৌধুরীগণের বাড়ী স্বদেশীগণের নিকট রাজবাড়ী নামে অভিহিত ছিল। মতান্তরে রাজা সূর্য কুমারের নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ হয়।  রাজা সূর্য কুমারের পিতামহ প্রভুরাম  নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার রাজকর্মচারী থাকাকালীন কোন কারণে ইংরেজদের বিরাগভাজন হলে পলাশীর যুদ্ধের পর লক্ষীকোল এসে আত্মগোপন করেন। পরে তার পুত্র দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ এ অঞ্চলে জমিদারী গড়ে তোলেন। তারই পুত্র রাজা সুর্য কুমার ১৮৮৫ সালে জনহিতকর কাজের জন্য রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন। রাজবাড়ী রেল স্টেশন এর নামকরণ করা হয় ১৮৯০ সালে। বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী জানা যায় রাজবাড়ী রেল স্টেশন এর নামকরণ রাজা সূর্য কুমারের নামানুসারে করার দাবি তোলা হলে বানিবহের জমিদারগণ প্রবল আপত্তি তোলেন। উল্লেখ্য বর্তমানে যে স্থানটিতে রাজবাড়ী রেল স্টেশন অবস্থিত উক্ত জমির মালিকানা ছিল বানিবহের জমিদারদের। তাদের প্রতিবাদের কারনেই স্টেশনের নাম রাজবাড়ীই থেকে যায়। এই সকল বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা হয় রাজবাড়ী নামটি বহু পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল। 


এলাকার নাওয়ারা প্রধান, জমিদার, প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিগণ রাজা বলে অভিহিত হতেন। তবে রাজা সূর্য কুমার ও তার পূর্ব পুরুষগণের লক্ষীকোলের বাড়ীটি লোকমুখে রাজার বাড়ী বলে সমাধিক পরিচিত ছিল। এভাবেই আজকের রাজবাড়ী। জেলা প্রশাসনের পটভূমিবর্তমান রাজবাড়ী জেলা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৭৬৫ সালে ইংরেজরা বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা দেওয়ানী লাভের পর উত্তর পশ্চিম ফরিদপুর (বর্তমান রাজবাড়ী জেলার কিয়দংশ) অঞ্চল রাজশাহীর জমিদারীর অন্তর্ভূক্ত ছিল। নাটোর রাজার জমিদারী চিহ্ন হিসেবে রাজবাড়ী জেলার বেলগাছিতে রয়েছে সানমঞ্চ, দোলমঞ্চ পরবর্তীতে এটি এক সময় যশোর জেলার অংশ ছিল। 

১৮১১ সালে ফরিদপুর জেলা সৃষ্টি হলে রাজবাড়ীকে এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এছাড়াও রাজবাড়ী জেলার বর্তমান উপজেলাগুলি অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। পাংশা থানা এক সময় পাবনা জেলার অংশ ছিল। ১৮৫৯ সালে পাংশা ও বালিয়াকান্দি নবগঠিত কুমারখালী মহকুমার অধীনে নেয়া হয়। ১৮৭১ সালে গোয়ালন্দ মহকুমা গঠিত হলে পাংশা ও রাজবাড়ী এই নতুন মহকুমার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং রাজবাড়ীতে মহকুমা সদর দফতর স্থাপিত হয়।১৮০৭ সালে ঢাকা জালালপুরের হেড কোয়ার্টার ফরিদপুরে স্থানান্তর করা হয় এবং পাংশা থানা ফরিদপুরের অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৮৫০ সালে লর্ড ডালহৌসির সময় ঢাকা জালালপুর ভেঙ্গে ফরিদপুর জেলা গঠিত হলে গোয়ালন্দ তখন ফরিদপুরের অধীনে চলে যায়। তখন পাংশা, বালিয়াকান্দি পাবনা জেলাধীন ছিল।

১৯৮৩ সালে সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে প্রতিটি থানাকে মান উন্নীত থানায় রূপান্তরিত করলে রাজবাড়ীকে মান উন্নীত থানা ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৮ই জুলাই থেকে সরকার অধ্যাদেশ জারী করে সকল মান উন্নীত থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করার ফলে রাজবাড়ী উপজেলা হয়। অবশেষে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ সকল মহকুমা জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সে থেকে রাজবাড়ী জেলায় রূপান্তরিত হয়।


ভালো লাগলে শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ

 
Copyright © 2013 রাজবাড়ী জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য
Distributed By Free Premium Themes. Powered byBlogger